জলকেলিতে রাখাইন নববর্ষের বরণ উৎসব

 


কক্সবাজার শহরের বৌদ্ধমন্দির সড়কের একটি মণ্ডপে শত শত তরুণ-তরুণীর সমাবেশ। ঠাঠা রোদ্দুর পুড়িয়ে দিচ্ছে গা। এ সময় গায়ে শীতল জলের স্পর্শ নিঃসন্দেহে শ্রান্তিদায়ক। এসব তরুণ-তরুণীও বসে নেই। পরস্পরের দিকে ছুড়ে দিচ্ছেন জল। গরম থেকে বাঁচা কিন্তু তাঁদের একমাত্র উদ্দেশ্য না। তাঁরা মেতেছেন উৎসবে। রাখাইন তরুণ-তরুণীদের রাখাইন সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় সামাজিক উৎসব। প্রতিবছর বাংলা নববর্ষের তিন দিন পর অর্থাৎ ১৭ এপ্রিল থেকে শুরু হয় রাখাইন অব্দের নতুন বছর। নতুন বছরকে বরণ এবং পুরোনো বছরকে বিদায় জানাতে এ সম্প্রদায়ের মানুষ জলকেলি উৎসবে মেতে ওঠেন। কক্সবাজারের রাখাইনপল্লিতে আজ বুধবার শুরু হয়েছে ‘জলকেলি’ কিংবা ‘পানিখেলা’। আজ শহরের টেকপাড়া, বৌদ্ধমন্দির সড়ক, ক্যাংপাড়া, বৈদ্যঘোনা, বড়বাজার, চাউলবাজার, হাঙরপাড়া ছাড়াও মহেশখালী, টেকনাফ, চৌফলদণ্ডি, খুরুশকুল, হ্নীলা, চৌধুরীপাড়া, রামু, পানিরছড়া, চকরিয়ার হারবাং, মানিকপুরসহ রাখাইন-অধ্যুষিত বিভিন্ন পল্লিতে রাখাইন বুড্ডিস্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মং চেন হ্লা বলেন, ‘সাংগ্রাং উৎসব রাখাইন সম্প্রদায়ের বড় সামাজিক উৎসব। জেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অন্তত ৫০ হাজার রাখাইন এই উৎসবে যোগ দিয়েছে। আগামী শুক্রবার সন্ধ্যায় জলকেলি শেষ হবে।’

১৩ এপ্রিল বুদ্ধ স্নানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। ওই দিন সকাল ৯টায় শহরের বার্মিজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে রাখাইন শিক্ষার্থীরা। এরপর কেন্দ্রীয় অগ্গমেধাস্থ মাহাসিংদোগ্রী মন্দিরে গিয়ে শিক্ষার্থীরা বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দান করেন নগদ টাকা, চাল, চিনি, দুধ, কলা, নারকেল, মোমবাতি, সাবান, দেশলাইসহ নানা পণ্য। এর পরের কয়েক দিন চলে বৌদ্ধস্নান, পঞ্চশীল ও অষ্টশীল গ্রহণ।
বে পানি ছিটিয়ে দিয়ে এসেছেন। এমন সময় কথা হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী চমাং রাখাইনের সঙ্গে। ‘এই উৎসবটা আরও কয়েকদিন পরে করার কথা। কিন্তু এ উৎসব উপলক্ষে সবাই গ্রামে ফিরে যাবেন। ওই সময় চাকরিসহ বিভিন্ন কারণে শহরে বসবাস করা রাখাইন সম্প্রদায়ের অনেক মানুষ যেতে পারেন না। ফলে তাদের শিশুরা এ উৎসব কি তা ভালোভাবে জানতে পারেনা। মূলত তাদের জন্যই আগেভাগে এই উৎসব পালন করা হলো। ’একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী উমে রাখাইন বলেন, ‘আমাদের সম্প্রদায়ে পানি হচ্ছে পবিত্রতার প্রতীক। আমরা একে অপরকে পানি ছিটিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে গেল বছরের সকল গ্লানি, জরাজীর্ণতা ধুয়ে মুছে জীবনকে শুভ্র সুন্দর করার প্রত্যাশা নিয়ে পবিত্র হই। আমরা বিশ্বাস করি এই জল আমাদের সব কষ্ট গ্লানি ধুয়ে নিয়ে যায়। ’

Comments